কাল বৈশাখ
অতনু রায়
ভাবতেই অবাক লাগে, যুগের সুতোয় গাঁথা সবকটা বৈশাখের মাপও আলাদা হতে পারে। কিছু বৈশাখ সযত্নে পুষে রাখে নতুন বছরের স্বাদটাকে, আবার কিছু বৈশাখ কালবৈশাখীর মেঘলা বাতাসে লুকিয়ে পড়তে চায়। শ্রাবণ ছাড়া বৈশাখেও পুরানো আঘাতের মেলা বসে। ঠিক এমনই এক বৈশাখে মেঘ এসেছিল আমার শহরে।
আজ থেকে প্রায় চার বছর আগের একটি ক্লান্ত শনিবার। ঠিক তার পরের দিন আসতে চলেছে নতুন একটি বছর। অফিসের গরুখাটা
শেষ হয়ে তখন সবে বাড়ি ফিরছি। শনিবার ছাড়া অন্য কোনোদিনেই সাতটার ট্রেন ধরার সৌভাগ্য আমার হয় না। এদিকে তার সাথে সম্পর্কটা একসপ্তাহ হলো ভালো যাচ্ছে না।মন মেজাজ তেমন ভালো নেই। কথা ছিল কালকের দিনটা তার সাথে কাটাবো।ট্রেন থেকে নামতেই হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। স্ক্রিনে ভেসে উঠলো তার নাম। ফোনটা ধরেই শুনলাম তার কঠিন গলা। আমাকে বলল তক্ষুনি দেখা করতে। আমি ভাবলাম বোধহয় আমার মান ভাঙাতে কাছে ডাকছে।আমিও কোনোরকম গ্যারেজ থেকে বাইকটা বার করে চটপট বাড়ি গেলাম। বাড়িতে কোনোরকম হাত-মুখ ধুয়ে মায়ের হাতের গরম চা অর্ধেক কাপ গোগ্ৰাসে গিললাম আর বেরিয়ে পড়লাম গঙ্গার উদ্দেশ্যে। বেশি দূর নয়, পাঁচ মিনিটেই পৌঁছালাম। দেখি তিনি আমার আগেই এসে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। হাতে একটা মস্ত ব্যাগ।
আমি বাইকের স্ট্যান্ডটা ফেলে তার কাছে গেলাম।যেমন যাই তেমনই কাছে গেলাম, অনেকটা কাছে। কিন্তু এই প্রথমবার আমার কাছে যাওয়াটা তার খুশির কারণ হয়ে উঠলো না।সেই লজ্জা, সেই লাল মুখ কোনোকিছুই যেন খুঁজে পেলাম না।সে যেন হঠাৎ দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে। আমাকে হঠাৎ বলল সে নাকী আর সম্পর্ক রাখবে না।আমি ভাবলাম মজা করছে,কারণ এর আগেও এমনটা করেছে। কিন্তু না, দেখলাম সবটাই সত্যি। সে তার হাতের ব্যাগটা আমার হাতে তুলে দিল। দেখলাম আমার দেওয়া সবকটা উপহার সযত্নে রাখা।
সে বলল সে আমাকে নিয়ে পারবে না সুখে থাকতে। সে অন্য একজনকে ভালোবেসে ফেলেছে, তার সাথে থাকতে চায়। বলে বিদায় জানালো। আর আমি বললাম, "ভালো থেকো"।
সে চলে গেল পীঠ দেখিয়ে। মনে হল মনটায় যেন এক শক্ত হাতের কামার হাতুড়ি বসিয়েছে।
আমিও সেই অবস্থায় বাইকে উঠে পড়লাম।মনে তখন শুধু পাথর । বাইকটা চলছে একশো দশে। চোখের জলে চশমার কাঁচে বাস্প জমে আসছে।সামনেটা শুধু আবছা।এমন সময় দেখলাম শুধু একটা আলো।আমাকে ছিটকে ফেলল ফুটপাতে।তারপর সবটাই রহস্যের মত ধোঁয়াশা। চোখ খুলে দেখলাম আমি হাসপাতালে। অনেক ক্ষত ছিল। তাও সেরে উঠেছি।
আজ আমি আছি ভালোই।সেও বোধহয় সুখে আছে। সেরে উঠলেও চোরা ক্ষতটা আজও চিনচিন করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন