ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

মঙ্গলবার, ৩১ জুলাই, ২০১৮

*নীলিয়ে দিও*

উদাসীন মন, চারিদিকে ঝমঝম বৃষ্টির আওয়াজ
ওই দূরে দেখা যায় দু-একটা ল্যাম্পপোস্টের আলো।হঠাৎ সব আলো নিভে গিয়ে শুধু আকাশে দু-একবার বিদ্যুতের ঝলকানি।

তুমি যে রাস্তা ধরে বাড়ি ফেরো, সেই গলির মোড়ে আজও দাঁড়িয়ে আছি। মাঝে মাঝে ভীষণ ভয় করছে জানো, বিদ্যুতের ঝলকানি আমার একেবারেই সহ্য হয়না, তার উপর রাক্ষুসে কালো মেঘ, পুরো আকাশ ঢেকে নিয়ে পৃথিবীর বুকে মৃত্যুঘণ্টা বাজাচ্ছে।

আজকে আবার ছাতাটা নিয়ে আসা হয়নি, ঐ দূরে একটা যাত্রী প্রতীক্ষালয় দেখতে পাচ্ছি। বেশ কয়েকবার ভেবেছিলাম ওখানে গিয়ে একটু আশ্রয় নিই। কিন্তু তোমার বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটা তো এই দিকে। একটু নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আজকে যদি তোমার চাঁদমুখ খানা মিস করে ফেলি।

পুরো আকাশ কালো মেঘে ঢেকে গেছে। আকাশের চাঁদ খানাও তো আজকে দেখা যাচ্ছে না। এখন যদি তোমার মুখ খানাও মিস করে ফেলি তাহলে কি পুরো রাতে আমার অন্ধকার যাবে না বলো? আজকে না হয় একটুখানি বিপদ মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম।

আজ তোমার একটু দেরি হয়ে যাচ্ছে না? আকাশের মতিগতি ভাল ঠেকছে না, আচ্ছা তুমি ছাতা নিয়ে এসেছো তো! আর ওই যে তোমার বান্ধবীটা কি যেন নাম? ও এসেছে আজকে, নাকি সেদিনের মত আজও একাই এসেছে তুমি পড়তে?

তোমার নীল রং প্রিয় বলে তোমার জন্য দুটো নীল ঝুমকো এনেছি, ওই যে নীল শাড়ীটা, ওটার সঙ্গে পড়বে দারুণ মানাবে কিন্তু তোমায়। সামনে কলেজের নবীন বরণ উৎসবের দিন এই নীল ঝুমকা দুটো নীল শাড়ির সঙ্গে পড়ে এসো, একটু দেখবো কেমন লাগে তোমায়।

যাক বাবা! বাঁচা গেলো অন্তত ল্যাম্পপোস্টের আলো গুলো তো জ্বললো। ঐতো কালো মেঘ গুলো দেখছি সরে গেছে, আকাশটাও একটু সহায় হল দেখছি। হবে না কেন বল, জানো তোমার মত পৃথিবীর ও নীল রং খুবই প্রিয় ছিল। তাইতো সে আকাশের নীলকে ভালোবেসে নিজেও সেই নীল মেখে নিয়েছে তার শরীরে। কই তখন তো আমি তার প্রেমে ব্যাঘাত ঘটাই নি তাহলে আমার বেলায় কেন ঘটবে বল।

আমারও মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় তোমার সমস্ত নীল আমি শরীরে মেখে নিয়ে নীলিয়ে যাই। তাতে তোমার নীল ফুরিয়ে যাবে না। বরং আরো বাড়বে, সত্যি ভালোবাসা গুলো এরকমই হয়, তুমি যদি উজার করে কাউকে দাও তাতে তোমারটা আরো বৃদ্ধি পাবে। তুমি দেখো আকাশের নীলে পৃথিবী নীলিয়ে গেছে, কিন্তু আকাশ নীল হীন হয়ে গেছে কি?

আচ্ছা আজকে তোমার আসতে এত দেরি হচ্ছে কেন? গতকালকে আমি আসিনি বলে আমার ওপর রাগ করে অন্য রাস্তা ধরে বাড়ি ফিরছো নাকি? আমি আসতে চেয়েছিলাম জানো, কিন্তু জ্বর করেছে বলে জোর করে মা ঘরে আটকে রাখলো। বলল আজকে আর বাইরে যেতে হবে না শরীরটা ভালো না তোর।কি করবো বলো মায়ের অবাধ্য তো হতে পারিনা।

ওই তো দেখতে পেয়েছি তোমাকে।ঐ নীল ছাতাটা তোমার না? হ্যাঁ ঠিকই ধরেছি। আজকে তোমাকে খুব ক্লান্ত লাগছে। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে তোমার আমি আর আগ বাড়িয়ে কথা বলতে গেলাম না। আজকে বরং তুমি চলেই যাও, বাড়ি ফিরে জিরিয়ে নিও। আমি কালকে আবার আসবো খন।

মল্লিকা বাড়ির ভিতরে ঢোকার পর আমিও উল্টো পথে হাঁটা শুরু করলাম, বাড়ির উদ্দেশ্যে। হঠাৎ মানিকের সাথে দেখা। "কিরে এদিকে কোথায় গেছিস মিলি কে বাড়ি পৌঁছে দিলি মনে হচ্ছে।তা কেমন আছিস বল?মিলি কেমন আছে?"

"ভালো আছি আমরা। কিন্তু তুই কি করছিস এখানে? আর তোর এই নীল শার্ট টা ছাড়া কি অন্য কোনো জামা নেই রে? আজকাল তোকে মাঝে মাঝেই এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি, এখনো কি মল্লিকার জন্য রোজ এখানেই দাঁড়িয়ে থাকিস নাকি? তা কতদূর এগিয়েছিস? কথা বলেছিস তো আজকে ?"

"তুই যে কি বলিস না।আর জামা থাকবে না কেন। নীল রং মল্লিকার খুবই পছন্দ,তাই...। হ্যাঁ এখানেই দাঁড়িয়ে থাকি রোজ বলতে পারিস, যদি একদিন ও না দেখে তাহলে মনে মনে ভাববে আমি ওকে ভালোবাসি না তাই না। না এখনো কথা হয়নি রে, আজকে বলতাম কিন্তু খুবই ক্লান্ত মনে হচ্ছিল, আর অনেক দেরিও হয়ে গেছে তাই আমি আর দেরি করলাম না। কালকে কথা বলবোই দেখিস।"

"সত্যি তুই পারিসও বটে কবির, সেই কতদিন ধরে শুনে আসছি তোর মুখে মল্লিকার কথা,আজ পর্যন্ত একটা কথাও বলতে পারলি না।কাল কাল করতে করতে দেখিস কোনো দিন অন্য কেউ বলে দেবে, আর মল্লিকা তার হয়ে যাবে। তোর দারা কিছু হবে না বুঝলি। কমপক্ষে কথা তো বল, তোর মনের কথাটা জানা, দেখবি ও ঠিকই হ্যাঁ বলে দেবে।"

"না রে থাক। যদি ও আমার কথা শুনে আমার উপর খেপে যায়। এখন তো মাঝে মধ্যে তাকায় আমার দিকে, পরে যদি তাকানো বন্ধ করে দেয়।আর যদি ওর বাবাকে বলে দেয় না, তাহলে তো ওর বাবা আমার এ পাড়ায় আসাই বন্ধ করে দেবে। তুই তো জানিস ওর বাবা কতো প্রভাবশালী ব্যক্তি?"

"হুম জানি তো। আচ্ছা ভাই থাক তাহলে আমি আসলাম, আমার আবার একটু দোকানে যেতে হবে মিলির জন্য একজোড়া ঝুমকো কিনবো, কালকে আমাদের রিলেশনশিপের একবছর পূর্তি।মিলি আবদার করেছে ওর নাকি একটা গোলাপী রঙের শাড়ি আছে কিন্তু ঝুমকো নেই সেটাই আমাকে নিতে বলেছে।"
"আচ্ছা"

আমার কি মল্লিকাকে বলা উচিত যে আমি ওকে ভালোবাসি? না মানিকের কথা শোনা যাবে না। তাহলে আমার রিলেশন শুরু হওয়ায় আগেই শেষ হয়ে যাবে।ওর তো মাসখানেক এর বেশি একটা রিলেশন ও টেকসই হয় না। আর ও এসেছে আমাকে সাজেশন দিতে। আর বলে দিলেই যদি ও না করে দেয়, তাহলে তো সবকিছুই শেষ, বরং না বলাই ভালো।

একি আবার বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। সত্যি আকাশ টা খুবই খামখেয়ালি হয়ে পরেছে আজকাল। কখন যে কি করে নিজেও বুঝে উঠতে পারছে না। আচ্ছা আকাশের নীলে যে পৃথিবী নীলিয়ে গেছে কই আকাশ আর পৃথিবীর তো এক হয়নি। আমরাও তো আকাশ আর পৃথিবীর মতোই একে অপরকে ভালবাসতে পারি। তাহলে আমার কি মল্লিকার সাথে এক হওয়াটা খুবই জরুরি?


 _জাহাঙ্গীর হোসেন_

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন