(গল্প)
১৭) "হঠাৎ"
--- সুদীপ্ত দেবনাথ
ট্রেন ছুটছে নিজের গতিতে ৷ জীবনও থেমে নেই ৷ সেও ছুটে চলেছে ট্রেনের মতো ৷ মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্টেশন থেকে নতুন নতুন যাত্রী নিয়ে এগিয়ে চলেছে দুরন্ত বেগে৷ জীবনও ঠিক সেই রকম ৷ কখনও স্থির নয় ৷ নতুন নতুন মানুষের সাথে ওঠা বসা , প্রাক্তনকে ভুলে যাওয়া।
ট্রেনটাই প্রচন্ড ভিড় ৷ ঝুলতে ঝুলতে যাচ্ছে যুবক স্বপ্নদ্বিপ ৷ স্বপ্নদ্বিপ এখন কলকাতায় থাকে ৷ কোনো এক কম্পানিতে চাকরি করে ৷ গ্রামের বাড়িতে এসেছিল সে ৷ ছুটি শেষে এখন সে তার কাজে ফিরছে ৷ স্বপ্নদ্বিপের মা তার জন্য বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক করেছেন ৷ সেই কারণেই তার গ্রামে যাওয়া ৷
হঠাত স্বপ্নদ্বিপের চোখে পরল ট্রেনের সেই কামরায় জানালার ধারে বসে থাকা মালিনীকে ৷ মালিনী এক সময় স্বপ্নদ্বিপের খুব কাছের বান্ধবী ছিল ৷ কিন্তু পড়াশোনা শেষে তাদের আর কোনো যোগাযোগ নেই ৷
মালিনীর পরনে আছে একটি শাড়ি, কপালে সিঁদুর , আর হাতে শাখা-পলা ৷
স্বপ্নদ্বিপ ও মালিনীর চোখে-চোখ পরলেও, কেউ কারোর সঙ্গে কথা বলে উঠতে পারছে না ৷ কিছু একটা দ্বন্দ্ব আজ তাদের মনের কথাটা ঠোটে আসতে দিচ্ছে না ৷
ঘটনাটা এই কয়েক বছর আগের ৷ মালিনী ও স্বপ্নদ্বিপের বন্ধুত্ব ছিল অতন্ত্য ঘনিষ্ঠের ৷ বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছাড়িয়ে কখন যে একে অপরকে ভালোবেসে ফেলে ছিল , তা দুজনের একজনও বুঝে উঠতে পারে নি ৷
হঠাত একদিন মালিনীর বিয়ের কার্ড স্বপ্নদ্বিপের বাড়িতে এসে পৌঁছল ৷ তখন যেন স্বপ্নদ্বিপের হৃদয়ে এক বজ্রপাত ঘটল ৷ স্বপ্নদ্বিপ নিজেও বুঝতে পারছিল না , মালিনীর বিয়ের খবর শুনে তার মনে কেন এই ব্যকুলতা সৃষ্টি হচ্ছে ৷
এদিকে মালিনীর মনও যেন এক দ্বন্দের সম্মুখিন ৷ তার হৃদয়েও উঠেছিল কোনো এক ঝড় ৷
কিন্তু না ! হল না , হল না সেই আগুন নেভানো ৷ মনের মধ্যে জ্বলন্ত আগুন নিয়ে সাজনাতলার আগুনের চারিপাশে সাতপাকে বাধা পরল মালিনী ৷
আর এদিকে স্বপ্নদ্বিপ তার চাকরির ইন্টারভিউ দিতে চলে গেল শহড়ে ৷ তার আর মালিনীর বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়া হল না ৷ বিয়েতে অনুপস্থিত থাকার জন্য মালিনী অভিমানে স্বপ্নদ্বিপের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিল ৷ আর স্বপ্নদ্বিপও মনের আগুন নেভানোর জন্য মালিনীকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকল ৷
কথাগুলো আজ তাদের দুজনের স্মৃতিতেই ভেসে আসছে ৷ ইচ্ছা করছে , সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব মুছে দিয়ে কথা বলতে, মনের সুপ্ত যন্ত্রনাগুলোকে নিভিয়ে দিতে ৷ কিন্তু কেউ-ই ঠিক বলে উঠতে পারছে না ৷
হঠাত এমন সময় ট্রেন পৌঁছল শিয়ালদহ স্টেশনে ৷ ট্রেন থেকে নামার জন্য লোকজনের কোলাহল সৃষ্টি হল ৷
স্বপ্নদ্বিপ প্লাটফর্মে নেমে দাড়িয়ে রয়েছে ৷ এদিক-ওদিক তাকিয়ে হইত সে মালিনীকেই খুঁজছে ৷ হঠাত পেছন থেকে কেউ একজন স্বপ্নদ্বিপের ঘারে হাত দিয়ে ডাকল ৷ স্বপ্নদ্বিপ চমকে উঠে পেছনে তাকালো ৷
"কিরে ? চিনতেই পারছিস না যে ৷" অন্তরে কান্না নিয়ে আধো আধো কন্ঠে মালিনী স্বপ্নদ্বিপকে বলে উঠল ৷
স্বপ্নদ্বিপ মুচকি হেসে উত্তর দিল "আরে না না ৷ চিনতে পারব না কেন !"
মালিনী বলল "ভালো আছিস তো ?"
"হ্যাঁ, এই চলছে ৷ আর তুই ?"
"হ্যাঁ, সব ভালো ৷ কাকিমা ভালো আছেন তো ?"
"হ্যাঁ হ্যাঁ, মা ভালোই আছে ৷"
এমন সময় কোর্ট-সুট পরা কোনো এক ব্যক্তি বছর দু-একের একটি বাচ্চা মেয়েকে কোলে নিয়ে এসে মালিনীকে বললেন "চলো , ট্যাক্সি রেডি ৷"
স্বপ্নদ্বিপ অবাক হয়ে ব্যক্তিটির দিকে তাকাল ৷ আর তখনই মালিনী স্বপ্নদ্বিপকে দেখিয়ে ব্যক্তিটিকে বলল "এই সেই স্বপ্নদ্বিপ ৷"
ব্যক্তিটি বললেন "ও তুমিই তাহলে স্বপ্নদ্বিপ ৷ তোমার কথা অনেক শুনেছি ৷ তো এখন কী করছ ?"
স্বপ্নদ্বিপ উত্তর দিল "এই একটা সফ্টওয়ার কম্পানিতে যব করছি ৷"
ব্যক্তিটি বললেন "ও তাহলে তো ভালো কথা ৷ আমাদের ওখানে এরকমই একজন ছেলে দরকার ৷"
তিনি পকেট থেকে একটি কার্ড বের করে স্বপ্নদ্বিপকে দিলেন "এই নেও আমার কার্ড ৷ আমার অফিস দিল্লিতে ৷ প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করো ৷"
এসময় মালিনী আবার বলল "হ্যাঁ , হয়েছে ৷ এবার চলো ৷ নাহলে ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে ৷ দাও, মেয়েকে আমায় কোলে দাও ৷"
মালিনীর তার স্বামীর কাছ থেকে মেয়েকে কোলে নিয়ে স্বপ্নদ্বিপকে বলল "আসি রে তাহলে ৷"
মালিনীর স্বামীও বলল "আসছি , ফোন করো অবশ্যয় ৷"
মালিনী তার মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে চলে গেল ৷ স্বপ্নদ্বিপ সেখানেই দাড়িয়ে রয়েছে ৷
স্টেশনটিতে অনেক ভিড় ৷ কিন্তু স্বপ্নদ্বিপের চোখের সামনে শুধু তারা তিনজন ভাসছে ৷
স্টেশনের কিছু মানুষ দ্রুততার জন্য স্বপ্নদ্বিপকে ধাক্কা মেরে চলে যাচ্ছে ৷ তবুও স্বপ্নদ্বিপ স্থির হয়ে দাড়িয়েই রয়েছে ৷ হঠাত মালিনীর স্বামী ঘুরে স্বপ্নদ্বিপের দিকে আসতে থাকে ৷ ওনার এভাবে ঘুরে আসা দেখে স্বপ্নদ্বিপ একটু আশ্চর্য হয় ৷
তিনি স্বপ্নদ্বিপের কাছে এসে দাড়ালেন ৷ কিছুক্ষন স্বপ্নদ্বিপের দিকে তাকিয়ে বললেন "মালিনী তোমার কাছে থাকলেই বেশি ভালো থাকত ৷ সেই হ্যাপিনেশটা আমি ঠিক দিতে পারি না ৷ তাই মনের কথাগুলো পুশে না রেখে ঐ তিনটি শব্দ কোনো দিন যদি ঠোটে আনতে পারতে , তবে আজ এই দ্বন্দ তোমাদের কারোর মনেই সৃষ্টি হত না ৷"
তিনি স্বপ্নদ্বিপের ঘারে হাত রেখে একটা সান্তনার আশ্বাস দিয়ে ফিরে গেলেন ৷ তারা স্টেশনের ভিড়ে মিশে গেল ৷ স্বপ্নদ্বিপও সেই দ্বগ্ধ মন নিয়ে তার গন্তব্যের উদ্যেশ্যে রওনা দিল ৷
স্টেশনের ভিড়ে অন্যমনস্ক হয়ে হাটতে হাটতে স্বপ্নদ্বিপের সঙ্গে কোনো এক মেয়ের হঠাত ধাক্কা লাগে ৷ ফলে মেয়েটির হাতে থাকা কিছু বই নিচে পড়ে যায় ৷
এ ধাক্কা যেন কালো মেঘাচ্ছন্ন আকাশে মেঘে মেঘে ধাক্কার বজ্রাঘাত ৷ এক বিদ্যুত সঞ্চারিত হয় তাদের শরীরে ৷ বৃষ্টি নেমে আসে তাদের মনের অন্তরে ৷
স্টেশনটিতেও বৃষ্টি নেমে আসে ৷ লোকজনের মধ্যে মাথা গোজার আশ্রয়ের জন্য তরিঘরি সৃষ্টি হয় ৷ কিন্তু মেয়েটি এখনও হইত বুঝতেই পারে নি, বাইড়ের জগতেও বৃষ্টি হচ্ছে ৷ সে একভাবে তাকিয়েই রয়েছে স্বপ্নদ্বিপের দিকে ৷ স্বপ্নদ্বিপ দোষী মনভাব নিয়ে বইগুলি মেয়েটির হাতে তুলে দেয় এবং সরি জানায় ৷ মেয়েটি কোনো উত্তর না দিয়ে তবুও স্বপ্নদ্বিপের দিকে চেয়ে রয়েছে ৷ স্বপ্নদ্বিপ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আবার চলতে থাকে ৷ মেয়েটি স্থিরই রয়ে যায় ৷
বৃষ্টি থেমে যায় ৷ আবারও সকলে মিশে যায় জনসমুদ্রে ৷ শহড় ছুটে চলে রাস্তার জমা জল পার করে নিজ নিজ গন্তব্যে ৷ জীবনও থেমে থাকে না ৷ সময় সময়ের কাজ ঠিক করে চলে ৷
💐**----------------**💐
১৭) "হঠাৎ"
--- সুদীপ্ত দেবনাথ
ট্রেন ছুটছে নিজের গতিতে ৷ জীবনও থেমে নেই ৷ সেও ছুটে চলেছে ট্রেনের মতো ৷ মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্টেশন থেকে নতুন নতুন যাত্রী নিয়ে এগিয়ে চলেছে দুরন্ত বেগে৷ জীবনও ঠিক সেই রকম ৷ কখনও স্থির নয় ৷ নতুন নতুন মানুষের সাথে ওঠা বসা , প্রাক্তনকে ভুলে যাওয়া।
ট্রেনটাই প্রচন্ড ভিড় ৷ ঝুলতে ঝুলতে যাচ্ছে যুবক স্বপ্নদ্বিপ ৷ স্বপ্নদ্বিপ এখন কলকাতায় থাকে ৷ কোনো এক কম্পানিতে চাকরি করে ৷ গ্রামের বাড়িতে এসেছিল সে ৷ ছুটি শেষে এখন সে তার কাজে ফিরছে ৷ স্বপ্নদ্বিপের মা তার জন্য বিয়ের সম্বন্ধ ঠিক করেছেন ৷ সেই কারণেই তার গ্রামে যাওয়া ৷
হঠাত স্বপ্নদ্বিপের চোখে পরল ট্রেনের সেই কামরায় জানালার ধারে বসে থাকা মালিনীকে ৷ মালিনী এক সময় স্বপ্নদ্বিপের খুব কাছের বান্ধবী ছিল ৷ কিন্তু পড়াশোনা শেষে তাদের আর কোনো যোগাযোগ নেই ৷
মালিনীর পরনে আছে একটি শাড়ি, কপালে সিঁদুর , আর হাতে শাখা-পলা ৷
স্বপ্নদ্বিপ ও মালিনীর চোখে-চোখ পরলেও, কেউ কারোর সঙ্গে কথা বলে উঠতে পারছে না ৷ কিছু একটা দ্বন্দ্ব আজ তাদের মনের কথাটা ঠোটে আসতে দিচ্ছে না ৷
ঘটনাটা এই কয়েক বছর আগের ৷ মালিনী ও স্বপ্নদ্বিপের বন্ধুত্ব ছিল অতন্ত্য ঘনিষ্ঠের ৷ বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছাড়িয়ে কখন যে একে অপরকে ভালোবেসে ফেলে ছিল , তা দুজনের একজনও বুঝে উঠতে পারে নি ৷
হঠাত একদিন মালিনীর বিয়ের কার্ড স্বপ্নদ্বিপের বাড়িতে এসে পৌঁছল ৷ তখন যেন স্বপ্নদ্বিপের হৃদয়ে এক বজ্রপাত ঘটল ৷ স্বপ্নদ্বিপ নিজেও বুঝতে পারছিল না , মালিনীর বিয়ের খবর শুনে তার মনে কেন এই ব্যকুলতা সৃষ্টি হচ্ছে ৷
এদিকে মালিনীর মনও যেন এক দ্বন্দের সম্মুখিন ৷ তার হৃদয়েও উঠেছিল কোনো এক ঝড় ৷
কিন্তু না ! হল না , হল না সেই আগুন নেভানো ৷ মনের মধ্যে জ্বলন্ত আগুন নিয়ে সাজনাতলার আগুনের চারিপাশে সাতপাকে বাধা পরল মালিনী ৷
আর এদিকে স্বপ্নদ্বিপ তার চাকরির ইন্টারভিউ দিতে চলে গেল শহড়ে ৷ তার আর মালিনীর বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়া হল না ৷ বিয়েতে অনুপস্থিত থাকার জন্য মালিনী অভিমানে স্বপ্নদ্বিপের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিল ৷ আর স্বপ্নদ্বিপও মনের আগুন নেভানোর জন্য মালিনীকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকল ৷
কথাগুলো আজ তাদের দুজনের স্মৃতিতেই ভেসে আসছে ৷ ইচ্ছা করছে , সব দ্বিধা-দ্বন্দ্ব মুছে দিয়ে কথা বলতে, মনের সুপ্ত যন্ত্রনাগুলোকে নিভিয়ে দিতে ৷ কিন্তু কেউ-ই ঠিক বলে উঠতে পারছে না ৷
হঠাত এমন সময় ট্রেন পৌঁছল শিয়ালদহ স্টেশনে ৷ ট্রেন থেকে নামার জন্য লোকজনের কোলাহল সৃষ্টি হল ৷
স্বপ্নদ্বিপ প্লাটফর্মে নেমে দাড়িয়ে রয়েছে ৷ এদিক-ওদিক তাকিয়ে হইত সে মালিনীকেই খুঁজছে ৷ হঠাত পেছন থেকে কেউ একজন স্বপ্নদ্বিপের ঘারে হাত দিয়ে ডাকল ৷ স্বপ্নদ্বিপ চমকে উঠে পেছনে তাকালো ৷
"কিরে ? চিনতেই পারছিস না যে ৷" অন্তরে কান্না নিয়ে আধো আধো কন্ঠে মালিনী স্বপ্নদ্বিপকে বলে উঠল ৷
স্বপ্নদ্বিপ মুচকি হেসে উত্তর দিল "আরে না না ৷ চিনতে পারব না কেন !"
মালিনী বলল "ভালো আছিস তো ?"
"হ্যাঁ, এই চলছে ৷ আর তুই ?"
"হ্যাঁ, সব ভালো ৷ কাকিমা ভালো আছেন তো ?"
"হ্যাঁ হ্যাঁ, মা ভালোই আছে ৷"
এমন সময় কোর্ট-সুট পরা কোনো এক ব্যক্তি বছর দু-একের একটি বাচ্চা মেয়েকে কোলে নিয়ে এসে মালিনীকে বললেন "চলো , ট্যাক্সি রেডি ৷"
স্বপ্নদ্বিপ অবাক হয়ে ব্যক্তিটির দিকে তাকাল ৷ আর তখনই মালিনী স্বপ্নদ্বিপকে দেখিয়ে ব্যক্তিটিকে বলল "এই সেই স্বপ্নদ্বিপ ৷"
ব্যক্তিটি বললেন "ও তুমিই তাহলে স্বপ্নদ্বিপ ৷ তোমার কথা অনেক শুনেছি ৷ তো এখন কী করছ ?"
স্বপ্নদ্বিপ উত্তর দিল "এই একটা সফ্টওয়ার কম্পানিতে যব করছি ৷"
ব্যক্তিটি বললেন "ও তাহলে তো ভালো কথা ৷ আমাদের ওখানে এরকমই একজন ছেলে দরকার ৷"
তিনি পকেট থেকে একটি কার্ড বের করে স্বপ্নদ্বিপকে দিলেন "এই নেও আমার কার্ড ৷ আমার অফিস দিল্লিতে ৷ প্রয়োজন হলে যোগাযোগ করো ৷"
এসময় মালিনী আবার বলল "হ্যাঁ , হয়েছে ৷ এবার চলো ৷ নাহলে ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে ৷ দাও, মেয়েকে আমায় কোলে দাও ৷"
মালিনীর তার স্বামীর কাছ থেকে মেয়েকে কোলে নিয়ে স্বপ্নদ্বিপকে বলল "আসি রে তাহলে ৷"
মালিনীর স্বামীও বলল "আসছি , ফোন করো অবশ্যয় ৷"
মালিনী তার মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে চলে গেল ৷ স্বপ্নদ্বিপ সেখানেই দাড়িয়ে রয়েছে ৷
স্টেশনটিতে অনেক ভিড় ৷ কিন্তু স্বপ্নদ্বিপের চোখের সামনে শুধু তারা তিনজন ভাসছে ৷
স্টেশনের কিছু মানুষ দ্রুততার জন্য স্বপ্নদ্বিপকে ধাক্কা মেরে চলে যাচ্ছে ৷ তবুও স্বপ্নদ্বিপ স্থির হয়ে দাড়িয়েই রয়েছে ৷ হঠাত মালিনীর স্বামী ঘুরে স্বপ্নদ্বিপের দিকে আসতে থাকে ৷ ওনার এভাবে ঘুরে আসা দেখে স্বপ্নদ্বিপ একটু আশ্চর্য হয় ৷
তিনি স্বপ্নদ্বিপের কাছে এসে দাড়ালেন ৷ কিছুক্ষন স্বপ্নদ্বিপের দিকে তাকিয়ে বললেন "মালিনী তোমার কাছে থাকলেই বেশি ভালো থাকত ৷ সেই হ্যাপিনেশটা আমি ঠিক দিতে পারি না ৷ তাই মনের কথাগুলো পুশে না রেখে ঐ তিনটি শব্দ কোনো দিন যদি ঠোটে আনতে পারতে , তবে আজ এই দ্বন্দ তোমাদের কারোর মনেই সৃষ্টি হত না ৷"
তিনি স্বপ্নদ্বিপের ঘারে হাত রেখে একটা সান্তনার আশ্বাস দিয়ে ফিরে গেলেন ৷ তারা স্টেশনের ভিড়ে মিশে গেল ৷ স্বপ্নদ্বিপও সেই দ্বগ্ধ মন নিয়ে তার গন্তব্যের উদ্যেশ্যে রওনা দিল ৷
স্টেশনের ভিড়ে অন্যমনস্ক হয়ে হাটতে হাটতে স্বপ্নদ্বিপের সঙ্গে কোনো এক মেয়ের হঠাত ধাক্কা লাগে ৷ ফলে মেয়েটির হাতে থাকা কিছু বই নিচে পড়ে যায় ৷
এ ধাক্কা যেন কালো মেঘাচ্ছন্ন আকাশে মেঘে মেঘে ধাক্কার বজ্রাঘাত ৷ এক বিদ্যুত সঞ্চারিত হয় তাদের শরীরে ৷ বৃষ্টি নেমে আসে তাদের মনের অন্তরে ৷
স্টেশনটিতেও বৃষ্টি নেমে আসে ৷ লোকজনের মধ্যে মাথা গোজার আশ্রয়ের জন্য তরিঘরি সৃষ্টি হয় ৷ কিন্তু মেয়েটি এখনও হইত বুঝতেই পারে নি, বাইড়ের জগতেও বৃষ্টি হচ্ছে ৷ সে একভাবে তাকিয়েই রয়েছে স্বপ্নদ্বিপের দিকে ৷ স্বপ্নদ্বিপ দোষী মনভাব নিয়ে বইগুলি মেয়েটির হাতে তুলে দেয় এবং সরি জানায় ৷ মেয়েটি কোনো উত্তর না দিয়ে তবুও স্বপ্নদ্বিপের দিকে চেয়ে রয়েছে ৷ স্বপ্নদ্বিপ বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আবার চলতে থাকে ৷ মেয়েটি স্থিরই রয়ে যায় ৷
বৃষ্টি থেমে যায় ৷ আবারও সকলে মিশে যায় জনসমুদ্রে ৷ শহড় ছুটে চলে রাস্তার জমা জল পার করে নিজ নিজ গন্তব্যে ৷ জীবনও থেমে থাকে না ৷ সময় সময়ের কাজ ঠিক করে চলে ৷
💐**----------------**💐
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন