ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

বুধবার, ১১ জুলাই, ২০১৮

জুলাই-র

================================
|                      আকস্মিক সংখ্যা       
                                                                   |
================================
সম্পাদকীয়,

       জলফড়িং-র আকস্মিক সংখ্যা "মাঝির নৌকো" আর সেই নিয়েই কলম ধরলেন যে সমস্ত কবিরা তাদের অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

মাঝির নৌকো অনেক কিছু মেখে নেয় প্রতিটা দিন, মাঝে মাঝে মেখে নেয় বিকেলের ঝোড়ও বা সমুদ্রজল তাকে কোনো দিন ডুবিয়েও দিতে পারে একথা সে( মাঝি+নৌকো) জানে কিন্তু তবুও প্রতিদিন যেতে হয় তাকে আর কুড়িয়ে আনে দিনের স্মৃতি। এ এক বিশাল জীবন যুদ্ধ আর কবিতা গুলি এখানে তারই বিজয় মালা বা তারই গল্প বলবে। আর কিছু বলবো না, বাকিটা আপনারাই বলবেন।

বলে রাখি এই সংখ্যা থেকে আমাদের প্রিন্টেডের জন্য মনোনীত হবে সেরা একখানা লেখা আগের আকস্মিকে মনোনীত হয়েছিল পলি ব্যানার্জির লেখা। চোখ রাখুন এবারের জন্য জলফড়িং-র তক্তাপোশে( আমাদের ফেসবুক গ্রুপ)......



                     | পড়ে নাও পাঠক গণ |


         <-<-<-<-<-<-<-<-<-<-<-<
================================
১.
  কৃষ্ণা নদী
        স্নেহা সরকার

খেয়া তরী বইতে জানে একশো ছায়াপথে,
তারায় তারায় আলোয় গায়ে মেঘের চেনা রথে।
জোয়ার ভাটায় আদুল গায়ে দস্যি ছেলের ডুব।
নদীর তীরে গ্রাম্য পাড়ায় শান্ত পাহাড় চুপ।
রাতের কপাট মুক্ত হলে ভোরের সবুজ ছায়,
মাঝি তখন বৈঠা টানে অনেক দূরের গাঁয়।
কত মানুষ যাত্রী হয় মাঝির মুখ চেনা।
কখনো তারা ঘুরতে আসে কখনো বেঁচা কেনা।
কখনো আবার তরী বেয়ে প্রেমিক দুটি মন,
কৃষ্ণা নদী বেয়ে আনে মেঘের সম্ভাষন।
ঝড়ের রাতে মৃত্যু ডাকে উথাল পাতাল ঢেউ।
মাঝি একাই ঘরে ফেরে সাহস দেয় না কেউ।
এই ভাবে ঠিক দিন চলে যায় খেয়া তরী বেয়ে।
মাঝি, সেতো পুরুষ নয় সেই কৃষ্ণা নামের মেয়ে।।
                             | পড়ে নাও পাঠক গণ |
================================
২.)
    জীবন-নৌকা'

নোঙ্গর বাঁধা নৌকাখানি
              মাঝি বিনা ই ভাসে
নিয়ম বাঁধা ছকের জীবন
               স্বাধীনতায় হাসে
জোয়ার-ভাটায় নৌকা দোলে
               লাগে কাছীতে টান
জীবনও চলে ওঠা-পড়ায়
               তবু থাকে অভিমান
মাঝি ছাড়া নৌকা যেমন
                ভাসে দিশাহীন
বেনিয়োমের জীবন তেমন
                 ভাসবে ছন্দহীন ।।
                       
                             | পড়ে নাও পাঠক গণ |
================================
৩.)
গানের হিসাব
         ( সায়ন্তনী হোড় )

ভেসে যাওয়া স্রোতের বুকে
আজ একমুঠো শ্যাওলাকে বন্দি করে রাখি।

মাঝিদের রসালো শব্দের
ঠেলায় নৌকা বয়ে চলে দূর দূরান্তে
কিছুটা জলের থেকে ধার
করা কষ্টকে মিশিয়ে নেয় সারাদিনের শ্রমের সাথে।

টুকরো করা আহ্লাদ পড়ে থাকে
নৌকার এক কোণে
সবটুকু ই যেন মাঝির অপ্রাপ্তির হিসাব মেটায় ।

                                  | পড়ে নাও পাঠক গণ |
================================
৪.)
  নৌকোর আর্তনাদ:
             সুস্মিতা।

নদীর থই থই জলে পড়ে নৌকা দোল খাই
ও পরানের মাঝি তুই কোথায়!
সোনালি-রূপোলি মাছের আত্মা জল থেকে উঠে আসে
নৌকৌ সখী গেলি কার বাড়ি,পীরিতের ঘরে
গহীন জলে কাটা ফোটাই মাছের দেহ
তুই কি জানতি না জলের স্রোতে
উতলা হয় পিরীতের আলগা শরীর
তুই কি জানতি না নদীর আছে
নানা কলা,নগ্নতার মগ্নকলা
নৌকোর গায়ের খুলে নিয়ে কাঠ ডুবোয়- চোবায়
পিরীতের কোন ঘাটে শেষে নৌকা টি ভেসে যায়
কই গেলি কালা মাঝি শাপলা হানাহানি করে
জলে মাছের লাফ জলে আগুন ধরায়
জলে বান্ধা আছে দেহ, চারদিকে নাচে ঢেউ
নৌকা দোলে শূন্য জলে। ও পরানের মাঝি ফিরে আয় তোর নৌকার তরে।

                                | পড়ে নাও পাঠক গণ |
================================
৫.)
  [মাঝির নৌকো]
         সুজাতা পাল

ও মাঝি, নও যে তুমি শুধু
আমার পার করিবার মাঝি,
জীবন যুদ্ধে বড্ড ক্লান্ত আমি, তাই আমি শরণাপন্ন তোমার নিকট আজি।

আমার হলুদ বরন গা,
আমার কোমল হৃদয়, আমার যৌবন,
আমার রেশমী চুল,
সবই যে আজ বিপদাপন্ন,
যদি হয়ে যায় বড় কোন ভুল।

তোমার নৌকো আজ আমার আশ্রয়
আর তুমি আমার জীবন মাঝি,
দেরী যে আর সয়না গো,
পাল তুলে দাও, যাতে পরানে বাঁচি।

কথায় বলে, হরিণ হরিণের শত্রু
তেমনি আমার সৌন্দর্য, আমার কৌমারিত্ব
আজ আমার সর্বনাশের কারণ,
তাই মাঝি তোমার নৌকায় করলাম আজকে আত্মসমর্পণ,
তুমি যেথা ইচ্ছা সেথায় যাও
তবে আমারে উদ্ধার কইরা দাও।
           
                             | পড়ে নাও পাঠক গণ |
================================
৬.)
মাঝির নৌকা


এদিক ওদিক বইতে থাকি
হালের টানে টানে

তোমার দিকে  চেয়ে থাকি রোজ
তুমি,ফের না মোর পানে।


রোজ দেখি তুমি স্রোতের টানে
ভেসে চল হেথা হোথা।

কখনো কেন জানতে  না চাও
আমি যেতে চাই কোথা।



তোমার সাথি মাঝ নদীতে
তোমার পালেতে টান।

আমি জলস্রোতের ছন্দে
গাই মন ভালো করা গান।



সাঁঝের বেলা টিমটিমে আলোয়
ক্লান্ত তুমি হায়

মন থাকে তোমা বাড়ি মুখো হয়ে
ফিরতে যে মন চায়।



আজও চলে যাও আবার না বলে
জানি,কাল আসবে ফিরে,

প্রতি রাত কাটে দিনের অপেক্ষায়।
ধীরে ধীরে,রোজ একটু করে যে,
আমার দিন ঘনিয়ে যায়।


সাথী তুমি,
ফিরে এসো যত তাড়াতাড়ি হয়,
ঢিঙি বাধা ফাঁস আজ যে বড় আলগা মনে হয়।

                            | পড়ে নাও পাঠক গণ |
================================
৭.)
    জীবনডিঙি
              রিয়া

আমি জীবননদীতে ডিঙা ভাসাই,
মনন পানসি বেয়ে এগিয়ে চলি সময়ের সন্ধানে....
জটিল চর্যাপদ পুঁথিতে হাতড়াই আবেগ,
পাইনা; স্তব্ধ হই---
থমকে গিয়ে চেয়ে থাকি নভোনীল প্রান্তে,
যেখানে অন্ধকার ক্যানভাসে---
জেগে থাকে লক্ষ তারা, মুক্তোবৎ;
হাজার আলোকবর্ষ বেয়ে কালের ছায়াপথে ভাসে.....
অজানা গ্রহাণুপুঞ্জের সঙ্গে করে আত্মসন্ধি---
ফের হেঁটে যায় ব্লাকহোল বেয়ে অন্তিমে।
কুয়াশার বিন্দুতে লেগে থাকা স্ফটিকজল---
পবিত্র প্রেমের আশনাই ভরা মনন আবেগ,
ডাইরির পাতায় লুকিয়ে রাখা;
শুকনো গোলাপের ন্যায় মহার্ঘ্য....
অতীত আঁকড়ে বাঁচা কিছু অন্তিম অনুভব।
পানসি ভেসে চলে মাঝগঙ্গায়---
কম্পাসের ভুল নিশানে ব্যার্থ হয় দিক,
দিন রাতের হিসেব ফুরিয়েছে কবেই....
চরৈবেতি নিত্য ঠিকানা অলিক।।
         
                                   | পড়ে নাও পাঠক গণ |
================================
৮.)
স্পর্শকাতর মেঘ ।
        -@সৌমিতা দেব
মেঘ করে এলো মুষলধারে, চেনা নম্বর বদলে গিয়েছে আগেই।
অসাবধানে ফোন কাটি, এখন আর কান্না আসেনা।
তবু পায়ের নীচে বহুদিন, লুকিয়েছি ফাটা মাটি ।

আমাদের সবটাই মিছিমিছি ছিলো, তবু টান ছিলো ভালবাসার।
নিজেরাই ভেঙেছি নিজেদের সে দিন, পাছে দোষ দেয় লোকে পরকীয়ার...।

এখন অসুখ ছাদ গড়িয়ে নামে, একটা জখম অনেক কাব্যে লেখায়।
এক ফোঁটা জল চিবুক অবধি নেমে, তারপর যেন হারিয়ে গেলো কোথায় ?

আর নেই তাঁকে না দেখতে পাওয়ার ভয়, তবুও জমেছে ভীষণ রকম টান।
নৌকো ভাসিয়ে মাঝিকে দেখেছো কখনো ?
ভুলেছে সে তাঁর নৌকারই গান..।

জীবনের নৌকো বড় অভিমানী, হাত ছেড়ে গেলে ফেরানো যায়না আর ,
মাঝির নৌকো তাও ভাল,
দিনান্তের কান্না চেপে মাঝির কাছেই ফেরে সহস্রবার।

                              | পড়ে নাও পাঠক গণ |
================================
৯.)
  ______মাঝির নৌকা
                    সুনন্দ মন্ডল

মাঝির নৌকা ভিড়ল ঘাটে
সন্ধ্যা হয় হয়!
চাঁদ নেমেছে নদীর তীরে
দূর হটেছে ভয়।

এপার থেকে ওপার মুখো
ওপার থেকে ফেরা।
যাত্রী নামে নোঙরে নৌকা
শ্মশান ঘাটে মড়া।

শোক নেমেছে ওদের বুকে
মাঝির ট্যাঁকে সুখ।
সেই ছেলেটা কবেই মরে
দিল কেবল দুখ।

দুঃখ নিয়ে পারাপারেই
খবর আনে মন।
দুই পারের কান্না বাঁধে
সুতোয় জাগে ক্ষণ।

মিলন করে মানুষেরই
তৃপ্তি আসে তাঁর।
দুখ সকল ক্ষনিকেরই
শোক মেনেছে হার।

                              | পড়ে নাও পাঠক গণ |
==============================      
১০.)    

   মাঝির নৌকো
      ---------------সুদীপ্ত সেন

ফেরির ঘাটে শুকনো কিছু পাতার
কুটো
একটু দূরে সূর্য ডোবার সময় আছে
তাই এখনও গঙ্গা পাড়ে নৌকো দুটো,
অল্প বয়স মাঝির ছেলে বাবার কাছে।

হালকা ডেকে ফিরছে বাড়ি শঙ্খচিলে
তাদের যাওয়া মাঝির ছেলে তাকিয়ে দেখে
এবার এখন  সূর্য ডুবে গঙ্গা জলে,
মাঝির ছেলে বায়না ধরে দেখবে মাকে।

দূরের দেশের নৌকো এবার ফিরবে ঘাটে
অনেক রকম স্মৃতির আঁচড় নৌকো নিল।
বিনিময়ের নিয়ম মেখে সূর্য পাটে,
ফিরল ফেরি নৌকো যেমন ফেরির ছিল।

                            | পড়ে নাও পাঠক গণ |
===============================
   
         

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন