ভিড় থেকে সরে আসি। সমুদ্র জানে না কারও নাম। অনেক লেখার শেষে সাদা পাতা এখনও আরাম...শ্রীজাত

সোমবার, ৯ জুলাই, ২০১৮


         শেষের সেদিন




               
                     

তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারই দান
               গ্রহণ করেছ যত
        ঋণী তত করেছ আমায়
                  হে বন্ধু বিদায় ।।

নাহ , আমরা কেউ তো কখনো বিদায় নিতে চাই না ।। কেউ কখনো এতটুকুও কাউকে ছেড়ে যেতে চাই না ।। কিন্তু ছেড়ে যেতে হয় , বলা ভালো ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয় ।। হ্যাঁ সেদিনের মতো শেষের সেদিন উনিভার্সিটিতে শেষ তম কবিতার আসর বসেছিলো ।। সকলের শেষে আমি পাঠ করলাম শেষের কবিতার শেষ কবিতাটি ।। পাঠ শেষ হতেই সকলের চোখে জল নিয়ে একে একে সবাই বিদায় নিলো শেষ বারের মতো , শুধু ফাঁকা ক্লাসরুমে আমি একা ।। নাহ , কেউ কোত্থাও নেই ।। আমাকেও যে চলে যেতে হবে , বেশি সময় নেই ।। কোনো মতে চোখের জল সামলে নিলাম ।। ব্যাগটা পিঠে নিয়ে বেঞ্চি থেকে একটা পা বাড়িয়ে সবে এগোতে যাবো , চোখে পড়লো বেঞ্চিতে লেখা আমারই কবিতার লাইন --

"বন্ধু আবারও তো দেখা হবে কখনো তোমার সাথে
সেদিন একটু  জায়গা রেখো তোমার অন্তত পাশে "


চোখের জল বাঁধ ভেঙেছে , রুমাল বার করে কোনো মতে নিজেকে সামলে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ।। এক অস্থিরকর পরিস্থিতি ।। কি করবো কেন করবো কিছুই যে বুঝতে পারছিলাম না ।। সেই মুহূর্তে ভাবতে পারিনি এর থেকেও কিছু অস্থিরকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে সেদিন ই ।। অস্থিরতা কাটাতে উনিভার্সিটিতে পাশে এক পার্কে গিয়ে বসলাম ।। কতো ছোট ছোট ছেলেমেয়ে খেলা করছে , কেউ চড়ছে দোলনায় কেউ বা স্লিপ ।। কেউ মাখছে ধুলো কাদা ।। আহা....একরাশ তৃপ্তি করা মুহূর্তের সম্মুখীন হলাম ।। কিছু খনেই মধ্যেই দেখলাম এক মহিলা ছোট্ট মেয়েটিকে বলছে শিল্পা চলো অনেক হয়েছে সন্ধ্যে ছ টায়  মিস আসবে ।। কিছুক্ষনের মধ্যে এক ভদ্রলোক বললো , অবিনাশ সামনে এক্সাম 1st ক্লাস হতেই হবে ।। একে একে দেখলাম সেই আনন্দের সাথে খেলতে থাকা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে গুলো কাঁদো কাঁদো মুখ করে বাবা মা এর হাত ধরে বেরিয়ে গেলো ।। ঠিক সেই মুহূর্তে কিছু প্রশ্ন আমার মাথায় ঘোরাফেরা করতে লাগলো ।।


দোলনায় চড়া হুড়োহুড়ি করা এই ছোটো ছোটো বাচ্চা ছেলে মেয়েরা একদিন কেউ গ্রেজুয়েসন কেউ বা মাস্টার্স কেউ বা ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিট করবে ।। আমার প্রশ্ন , এই পড়াশোনা কমপ্লিট করে আদৌ কি এরা একটা চাকরি পাবে ? যদি তাই না হয় তবে কেন ছোটোবেলা থেকে শিক্ষা দেওয়া হয় শিক্ষা চাই শিক্ষা চাই বলে ? যদি তাই হয় তবে কেন ছোটো বেলা থেকে বলা হয় শিক্ষা সকলের অধিকার ? যদি তাই হয় তবে কেন ছোটবেলায় শেখানো হয় , তোমাকে এতো পার্সেন্ট পেতেই হবে ? ফাস্ট ক্লাস চাই ই চাই ।। ঠিক এই জায়গায় আবারও প্রশ্ন , একটা শিক্ষিত বেকার যদি লক্ষ লক্ষ টাকার অভাবে টাকা দিতে না পেরে  চাকরি না পেয়ে পেট চালানোর জন্য বাসে বা ট্রেনে ধুপকাটি কিংবা লজেন্স বিক্রি করে , এর জন্য দায়ী কে ? যদি একটা শিক্ষিত বেকার চাকরির অভাবে যদি গায়ে আগুন ঢেলে কিংবা মধ্যরাতে কিছু ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করে এর জন্য দায়ী কে ? প্রশ্নটা রইলো , তবে আজও আমি উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম ।।

1 টি মন্তব্য: